তপ্ত বালুরাশি, রক্তে রঞ্জিত প্রান্তর।
চারিদিকে শুধু মৃত্যু, নিস্তব্ধতা আর কাঁপন ধরানো হাহাকার।
৭২ জন প্রাণ, সত্যের পতাকায় আত্মাহুতি দিয়েছেন—
কেউ ভাই, কেউ পুত্র, কেউ শিশু—সবাই শহীদ।
তবুও এক বিন্দু ভয় নয়, এক চুল আপস নয়।
ইমাম হোসাইন একা দাঁড়িয়ে আছেন—
পরনের কাপড়ে রক্ত, মুখে ক্লান্তির রেখা, চোখে অমোঘ দীপ্তি।
শিবিরে ছোট্ট রুকাইয়ার কান্না—”আব্বা, পানি…!”
আলী আসগর নিরব কান্নায় আকাশ বিদীর্ণ করে,
আর জয়নব একা হয়ে বসে আছেন বোনের শূন্যতায়।
ইমাম হোসাইন হাত তোলে আসমানের দিকে—
চোখ তুলে তাকান আল্লাহর দিকেই—
সেই আর্ত হৃদয়ে ফুঁটে ওঠে এক বেদনার মোনাজাত:
“হে আমার রব! তুই তো দেখছিস… আমি তোর পথে জীবন দিলাম,
তোর সন্তুষ্টির জন্য বুক পেতে দিলাম তলোয়ারের নিচে।
পানি নেই, খাদ্য নেই, তবুও তোর ইবাদত থেমে যায়নি।
আমার শিশুরা তৃষ্ণায় কাঁদে, আমার সাথীরা শহীদ,
তবু তোর হুকুমের সামনে আমার কোনো অভিযোগ নেই।
তুই সাক্ষী থাক—এই রক্ত, এই ত্যাগ, শুধু তোর জন্যই।”
শেষ যুদ্ধে নামার আগে বলেন—
“আমার প্রাণ যাবে, কিন্তু মাথা নত হবে না ইয়াজিদের জুলুমের সামনে।
ইসলামকে রক্ষা করতে আমার মৃত্যু হোক সাক্ষী!”
তারপর রক্তাক্ত বুকে তলোয়ার পড়ে।
পবিত্র মুখে শেষ বাক্য:
“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন…”
“হে আল্লাহ! আমার কুরবানী কবুল করে নে…”
আজও কারবালার বালুকণায় সেই আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হয়,
যখন কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়,
যখন কোনো মা সন্তানের নামে দোয়া করে,
যখন কোনো শিশু নির্যাতনের শিকার হয়।
ইমাম হোসাইন আমাদের শেখালেন—
ত্যাগের চূড়ান্ত মানে কী,
ভালোবাসার সর্বোচ্চ দাগ কোথায় আঁকা যায়।